বহু জল্পনা কল্পনা শেষে ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন। শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) দেশটির বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিদর্শনে দেখা যায় তাদের। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ছোট মেয়ে কিম চু-এইকে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ পরিদর্শন করেছেন কিম।
যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ঘণ্টাখানেক আগে তারা সেখানে যান।
সাধারণত কিম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তেমন একটা দেখা যায় না। এমনকি গোপনে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেওয়া কিমের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়না।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ কিমের পরিদর্শনের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যায়, মেয়ের হাত ধরে হাঁটছেন ও কথা বলছেন কিম। শনিবার এ নিয়ে একটি সংবাদও প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থাটি।
ওই প্রতিবেদনে কেসিএনএ জানায়, কিম জং উন দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন শত্রুরা যদি হুমকি দিতে থাকে তাহলে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে এবং সর্বাত্মক সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ মোকাবেলা করা হবে।
কেসিএনএ আরও বলছে, পরীক্ষাটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ হওয়ায় স্বাগত জানিয়েছেন কিম। এই পরীক্ষাকে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তার প্রশাসন ও কোরিয় উপদ্বীপের মিত্রদের প্রতি একটি সতর্কবাণী। যে কোনো উসকানিতে ক্ষেপণাস্ত্রের ট্রিগার চাপ দেওয়া হবে বলে সতর্কও করেছেন কিম।
এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের দল ও সরকারের উচিত শত্রুদের যুদ্ধ মহড়ার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা। ’
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের হোক্কাইডো অঞ্চলের পশ্চিম সমুদ্রে অবতরণ করেছে। ছয় হাজার ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে পৌঁছানো আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ১ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিল।
জাপান দাবি করছে, শুক্রবার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
শুক্রবার ছোড়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন কেসিএন। তারা বলছে, হুয়াসং-১৭ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং এর লক্ষ্য পরমাণু প্রতিবন্ধকতা অর্জন করা।
উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ‘আমরা এর ক্ষুদ্ধ পুতিক্রিয়া জানিয়েছি। আমরা তাদের বলেছি, এই ধরণের কর্মকাণ্ড একেবারেই সহ্য করা হবে না। ’
চলতি বছরে রেকর্ড ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে উত্তর কোরিয়া। শুধুমাত্র গত দুই মাসে ৫০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। এর মধ্যে বেশিরভাগই স্বল্প পাল্লার। তবে এই মাসের শুরুরু দিকে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল পিয়ংইয়ং। তবে মধ্য পথেই এটি ব্যর্থ হয় বলে জানিয়েছিল সিউল।
উত্তর কোরিয়া শিগগিরই সপ্তমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে, এমন শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের। এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাইডেন। পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করেন তারা। এর জেরে গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সো হাই যুক্তরাষ্ট্র ও কোরীয় উপদ্বীপে তাদের মিত্রদের সতর্ক করেন।